গত ৩ দিন যাবত ২ শিশু সন্তান সহ গৃহবধূকে ফাতেমা জান্নাত (৩৫) ঘরে তালা বদ্ধ করে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। হৃদয় বিদারক এবং অমানবিক এই নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর গ্রামে। ২ শিশু পুত্র নিয়ে অবরুদ্ধ ফাতেমা জান্নাত মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে , অমানবিক এই নিষ্ঠুর কান্ড। যা মধ্রযুগীয় কর্বরতা হার মানিয়েছে।
অবরুদ্ধ ফাতেমা জান্নাত এর অভিযোগ ও এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১০ বছর আগে ঢাকা শহরে মহেশ পুরের ফতেপুর গ্রামের দুলা মিয়ার ছেলে আব্দুল কাদের লিটন ওরফে লিটন মুন্সি ভালবেসে বিয়ে করেন ভিকটিম ফাতেমা জান্নাতকে। বিয়ের পর তাদের মাঝে জন্ম গ্রহণ করে ২ টি পুত্র সন্তান। যাদের নাম লামিম (৮) এবং লাবিব (৩)
দুই সন্তান জন্মের পরই পাষন্ড স্বামী আব্দুল কাদের লিটন সৌদি আরবে চলে যায়। সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে দেশে এসে নানা অপবাদে গৃহবধূ ফাতেমা জান্নাত এর ওপর নির্যাতন শুরু করে এবং ভাই, ভাগ্নি, ভাগ্নি জামাইয়ের সহযোগিতায় যৌতুকের টাকা দাবী করে। ফলে গৃহবধূ ফাতেমা জান্নাত ঝিনাইদহের আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনের আওতায় মামলা করেন। মামলা করায় কাল হয় ওই গৃহবধূর। মামলা করার কারণে ক্ষিপ্ত হয় স্বামী, তার ভাই, ভাগ্নি ও ভাগ্নি জামাই। গত ৩ দিন আগে তারা গৃহবধূ ফাতেমা জান্নাতকে ঘরে অবরুদ্ধ করে ঘরের বাইরের ফটকে ১২টি তালা ঝুলিয়েছে। ফাতেমা জান্নাত অভিযোগ করেন, তার স্বামী আব্দুল কাদের লিটন সহ একই গ্রামের রশিদ, আলমগীর, ছোদরী, বেকার শহীদ হোসেন আলী ও মফিজ গন তাকে এই ভাবে নির্যাতন করে আসছে। ভিকটিম গৃহবধু ফাতেমা জান্নাত আরো অভিযোগ করেন, তার স্বামী আব্দুল কাদের লিটন এর আগেও আরো ৩টি স্ত্রীকে একই কায়দায় তালাক দিয়েছে।এই ব্যাপারে ২নং ফতে পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, মেয়েটি আসলে অসহায়। আমি তাদের মধ্যে মিমাংসার চেস্টা করে ব্যার্থ হয়েছি। ভিকটিম ফাতেমা জান্নাতকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি। এর আগে আরো অনেক মেয়েকে এভাবে লিটন ক্ষতি করেছে বলে স্বীকার করেন চেয়ারম্যান। তবে অভিযুক্ত আব্দুল কাদের লিটন গং এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। তারা এই ঘটনার পর ঢাকায় চলে গেছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
মহেশ পুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, এমন ঘটনার কথা আমি শুনে ঘটনা স্থলে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়েছি। আপাততঃ গৃহবধূ ফাতেমা জান্নাতকে তার ভাসুরের বাড়ীতে থাকার জন্য বলেছি। থানার সাব – ইন্সপেক্টর জমির হোসেন ঘটনাস্থল থেকে জানান, আমরা ঘটনাস্থলে এসে ভিকটিম ফাতেমা জান্নাত ও তার ২ শিশু পুত্রকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে এসেছি। তবে পিতৃ-মাতৃহীন অসহায় গৃহবধূর শেষ অবস্থা কি হয়? তার নিরাপত্তার ব্যাপারে কি ব্যাবস্থা নেয়া হয়, সেটিই দেখার ব্যাপার বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এই ঘটনায় গৃহবধূটির ও তার শিশু সন্তানদের নিরাপত্তার ব্যাপারে জেলার পুলিশ সুপার এর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।