বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে ভার্চুয়ালি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আজ রবিবার(১০ জানুয়ারি) বেলা ১১ টায় উক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই ছিল দেশাত্মকবোধক গান ও কবিতা আবৃত্তি। ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: আশরাফ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবেদা সুলতানা। আরো উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ২২তম শিক্ষক পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এসএম কামাল উদ্দীন হায়দার হক সহ তিতুমীর কলেজের সকল বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষক- শিক্ষার্থীবৃন্দ। আরো যুক্ত ছিলেন- তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: রিপন মিয়া, শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক-মাহামুদুল হক জুয়েল মোড়ল। আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন অত্র কলেজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মুনজুমা হক। পবিত্র কোরআন ও গীতা পাঠ এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো: সালাউদ্দীন বলেন– বঙ্গবন্ধুর প্রত্যার্বতনের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার পূর্নতা জানায়।পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করার পর বাংলার মানুষ দেখিয়েছে কতটা ভালোবেসেন।বাংলার মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দিয়েছেন। আজকেরে এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধু সহ সকল শহীদের। মূখ্য আলোচক প্রফেসর মুনজুমা হক বলেন– বঙ্গবন্ধু তখন জানতেন দেশি বিদেশী চক্রান্ত ও বিরোধীতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন কঠিন হবে।পাকিস্তানিদের উদ্যোশই ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা কিন্তু পারেনি আন্তর্জাতিক চাপের কারনে।বিশেষ করে ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সহ বহুরাষ্ট্র প্রধানগণ বঙ্গবন্ধুর পক্ষ নিয়েছিলেন।হত্যা করতে না পারার ক্ষোভ ইয়াহিয়া খান মেনে নিতে পারেননি।বারাবর ভুট্টোখান কে বলেছিলেন যেন ফাঁসি দেয়া হয়। যখন মুক্তির ঘোষনা রেডিও যোগে দিয়েছিল তখন বাংলার মানুষ আনন্দমিছিল করেছিল।১৬ ডিম্বেবর স্বাধীনতা অর্জন হলেও বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া স্বাধীনতার স্বাদ ছিল না।ভারত হয়ে যখন বাংলায় প্রবেশ করার আগে ভারতীয়রা একনজর দেখার জন্য হাজারো মানুষ দাড়িয়ে ছিল।তিনি বলেছিলেন- পাকিস্তানের সাথে কোন আপুষ নয়, স্বাধীনতার জন্য আপনাদের সহায়তা চাইবো।বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার মানুষের জন্য নয় তিনি ছিলেন পুরো বিশ্বের জন্য এক আর্দশ।বাংলাতে প্রবেশ করার পর বাংলার মানুষ স্বাধীনতার আনন্দ করিছিল সেদিন। বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল বাংলার মানুষের জন্য তা পুরো দেশ ও জাতী দেখেছে।বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। প্রফেসর ড.আবেদা সুলতানা বলেন– আজ ১০ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন।বাংলার মানুষের ভালোবাসা আর বৈশ্বিক চাপের মুখে পড়ে পাকিস্তানিরা কারাগার থেকে মুক্তি দেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে।মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু ছিল নিবেদিত প্রাণ।পাকিস্তানিদের নানান অত্যাচার সহ্য করেও তিনি থেমে যায়নি। শুধু বাংলা নয় পুরো বিশ্বের কাছেও বঙ্গবন্ধু ছিল বিশেষ ব্যক্তি।৭২ এর ১০ জানুয়ারি ভারত হয়ে বাংলায় আসার সময় সেদিন ভারতে ও বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অর্নার পেয়েছিলেন।বাংলাকে যখন স্বাধীন করে পাকিস্তানের অত্যাচার থেকে মুক্ত করলেন ঠিক তখনেই বিপদগামী একশ্রেনির ঘাতক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো।তারা যখন জানতো না বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলা, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলার মানুষ। মার্কেটিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো: ময়েজ উদ্দিন আহমেদ বলেন– বঙ্গবন্ধু ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী।পাকিস্তানীদের শাসন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছিলেন অনড়। পাকিস্তানিদের লোভনীয় প্রস্তাব না গ্রহণ করে তিনি বাংলার মানুষের মুক্তির কথা ,বাংলার মানুষের কথা ভেবেছেন। তিনি ছিলেন উদার মানুষ।দেশকে নিয়ে কেমন ভাবনা ছিল, স্বপ্ন ছিল তা তিনি দেখিয়েছেন।আসুন আমার সবাই বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া স্বপ্ন পূরণে আমরা কাজ করি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এসএম কামাল উদ্দীন হায়দার বলেন– ১৯৭২ সালে আজকের এ দিনে দেশের মানুষ শুধু একটা কথাই উচ্চারণ করেছিলেন জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।দেশে প্রত্যাবর্তন করেই সরাসরি তিনি রেসর্কোস ময়দানে গিয়েছিল।বাংলার মানুষকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছিল অগাধ স্বপ্ন। কিন্তু এ স্বপ্নকে ধোলোয় মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল পাকিস্তানিরা।বঙ্গবন্ধুর মনে বাংলার মানুষের জন্য এতটাই ভালোবাসা ছিল যে পাকিস্তানিদের অত্যাচার সহ্য করেও বাংলাকে স্বাধীন করার স্বপ্ন ত্যাগ করেননি।তাইতো আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভির শ্রদ্ধা। বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর কামরুন নাহার বলেন-কারাগারে পাকিস্তানিরা প্রতিনিয়তই বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুর ভয় দেখাতো। বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়া হতো। তবুও তিনি ভয় পাননি। বরং কঠোর মনোবল আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করেছিলেন। ১৯৭২ সালে যখন বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি বাংলার স্বাধীন মাটিতে পা রাখেন।বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়েছেন। বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু সমার্থক।বঙ্গবন্ধুর অবদান বাংলায় অনিস্বিকার্য়। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়ল বলেন– ১৯৭১ সালের ১৬ ডিম্বেবর স্বাধীনতা দিবসে বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া আনন্দ উপভোগ করেনি। বাংলার মানুষের আন্দোলন ও বর্হিবিশ্বের চাপে পাকিস্তান শাসকরা জেল থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছি।এবং ১০ জানুয়ারি যখন বাংলার মানুষ স্বাধীনতার সেই আনন্দ প্রকাশ করিছিল।স্বদেশ প্রত্যার্বতনে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারে প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।আর আমাদের উচিত বঙ্গবন্ধুর আর্দেশে আমাদের জীবন গড়। সর্বশেষ প্রধান অতিথির ব্যক্তব্যে প্রফেসর আশরাফ হোসেন বলেন– ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি যারাই নিজ চোখে দেখার সুযোগ হয়েছিল তারা জাতীর সবচেয়ে ভাগ্যবান।ছোটবেলা থেকেই বাংলা ভাষা, বাংলাদেশবঙ্গবন্ধু কে নিজের মাঝে ধারণ করেছি।৭২ এ দিনে রেডিওতে প্রত্যাবর্তনের হৃদয়কাড়া শব্দ ছিল বঙ্গবন্ধু ফিরে আসছেন তার স্বপ্নের বাংলার। কি এক অদ্ভুত শিহরণ! বাংলার মানুষের অধির আগ্রহের প্রহর যেন শেষ হচ্ছিল না। বঙ্গবন্ধু যখন ভারতের বিমানবন্দরে নামলেন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দীরা গান্ধী ও তৎকালিন রাষ্ট্রপ্রতি বঙ্গবন্ধুকে সম্মাননা জানান। বঙ্গবন্ধু তখন মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সবাইকে অবাক করিয়ে বলেন- মিসেস ইন্দিরা গান্ধী আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সহযোগিতা করার জন্য। এবং আপনার কাছে জানতে চাই ভারতের সর্বশেষ সৈন্যটি কবে বাংলার মাটি থেকে ভারতে ফিরবে? এই যে বঙ্গবন্ধুর এক দূরদূর্শিতা আমাদের এখনো ভাবায়। তিনি আরো বলেন- ১৬ ডিম্বেবর স্বাধীনতার পর বাংলার মানুষের মনে তখন চিন্তা হয় বঙ্গবন্ধু ফিরে আসবে তো? তারপর বাংলার মানুষ ও আর্ন্তজাতিক চাপের জন্য বাধ্য হয় মুক্তি দিতে।বঙ্গবন্ধু ছাড়া তো বাংলার স্বাধীন অর্পূণ।বঙ্গবন্ধ ছাড়া বাংলাকে কল্পনা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু আসলেন তার স্বপ্নের বাংলায়।বঙ্গবন্ধুর জন্যই আমরা আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক।বঙ্গবন্ধু সবে যখন যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে গুছানোর চেষ্টা করছিলেন ঠিক তখনই দেশি বিদেশী চক্রান্তে কিছু বিপদগামী মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। আর তখন থেমে যায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে বাংলাদেশ। এরপর সব কিছুই ইতিহাস।আজ এ দিনে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আর স্বাধীনতা অর্জনে সকল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।