প্রেস বিজ্ঞপ্তি
সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল (সরকার ও শোষকগোষ্ঠি)দের স্বার্থরক্ষাকারী প্রচলিত রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিপরীতে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান সভার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্যে প্রয়াত কমরেড ওয়াজেদ আলী ও কামরুজ্জামান মনার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী সকল গণতান্ত্রিক ব্যক্তি, শক্তি ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
আজ ১১ অক্টোবর ২০২০ রবিবার সকাল ১১টায় কমরেড ওয়াজেদ আলী ও কামরুজ্জামান মনার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কালীগঞ্জ নিচমতলা বাসস্ট্যান্ডের কোচিং সেন্টারে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি তোজাম্মেল হোসেন। আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, কৃষক সংগ্রাস সমিতি ঝিনাইদহ জেলা সহ-সভাপতি সদর উদ্দিন সিকমল প্রমুখ। সভাটি পরিচালনা করেন যুগ্ম-আহ্বায়ক মানবেন্দ্র দাস মিন্টু।
স্মরণ সভা থেকে দেশে একের পর এক নারী ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটে চলায় এর তীব্র নিন্দ ও প্রতিবাদ জানানো হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষণ কার্যত এক অপ্রতিরোধ্য অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। দেশের আনাচে-কানাচে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বয়সী নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। কখনো কখনো অবিশ্বাস্য রকমের পাশবিক কায়দায় একের পর এক ঘটে চলেছে ধর্ষণ; যেন ধর্ষকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ধর্ষণপ্রবণতা সংক্রামক ব্যাধির মতো বেড়ে গেছে। সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের কতিপয় কর্মীর সংঘবদ্ধ ধর্ষণযজ্ঞের পর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানো এবং সেই ন্যক্কারজনক পৈশাচিকতার ভিডিও চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রতিবাদের প্রয়োজন নেই; সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। আর খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সিলেট ও নোয়াখালীর দুই ঘটনাকে ‘বর্বরতার চুড়ান্ত উদাহরণ’ বলে আখ্যায়িত করে আশ্বাস দিয়েছেন, এই ঘটনায় যারাই জড়িত হোক না কেন, তাদের সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতেই হবে। কিন্তু খোদ সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার মাত্র ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশের ক্ষেত্রে আদালতের রায় ঘোষিত হয়েছে; আর অপরাধীদের দন্ডদেশ ঘোষিত হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ মামলায়। যে দেশে ৯৯ শতাংশের বেশি মামলায় অপরাধীরা শাস্তির বাইরে থেকে যায়, সেই দেশে সময়ে-সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের ন্যায়বিচারের আশ্বাসবাণী উচ্চারণ জনমনে কোনো আশ্বাস জাগাতে পারে না। আসলে কোনো দেশে আইনের শাসন কার্যকর থাকলে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত হয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়; এ জন্য সরকারের নেতারা কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস-অঙ্গীকারের প্রয়োজন পড়ে না, প্রশ্নও ওঠে না। নারীর প্রতি সহিংসতা তথা নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা বন্ধ করতে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ছাড়া সম্ভব নয় যা মূলত সমাজ পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, দূর্যোগ-দূর্নীতি-দুঃশাসন-সর্বোপরি নৈরাজ্য, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার বিকল্প নাই। এ প্রেক্ষিতে উপরোক্ত দাবির আন্দোলনকে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল (সরকার ও শোষকগোষ্ঠি)দের স্বার্থরক্ষাকারী প্রচলিত রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিপরীতে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান সভার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্যে প্রয়াত কমরেড ওয়াজেদ আলী ও কামরুজ্জামান মনার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী সকল গণতান্ত্রিক ব্যক্তি, শক্তি ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।