ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী বাজারে পায়রা নেছা বিবি ওয়াকফ ষ্টেট নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। ষ্টেট থেকে আয় হওয়া অর্থ ব্যাংকে জমা হচ্ছে না। এছাড়া মোতাওয়াল্লীর বিরুদ্ধে ষ্টেটের অর্থ লোপাটেরও অভিযোগ উঠেছে। ষ্টেটের বৈধ ওয়ারিশ নিয়ে দায়ের হয়েছে ঝিনাইদহের আদালতে মামলা। মোতাওয়াল্লী পরিবর্তনের জন্য ওয়াকফ প্রশাসকের দপ্তরেও জমা পড়েছে অভিযোগ। এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে ওয়াকফ ষ্টেটের যশোর অফিস। ইতিমধ্যে তারা বিষয়টি তদন্ত করে গেছেন। ঝিনাইদহ আদালতে দায়েরকৃত মামলা ও ওয়াকফ প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, পায়রা নেছা বিবি ওয়াকফ সম্পত্তির প্রকৃত মালিক হচ্ছে আহম্মদ বিশ্বাসের ছেলে আবুল ইসলাম ওরফে মোঃ ইসলাম আলী মিয়া। পায়রা নেছা বিবি হচ্ছে আবুল ইসলামের মা। পিতা আহম্মদ বিশ্বাস ইন্তেকাল করলে মা পায়রা নেছা বিবি একই এলাকার আব্দুল হামিদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এদিকে ১৯৪৮ সালে ৪৩৯ ডিগ্রির বুনিয়াদে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে আবুল ইসলামের নামে নিলাম সুত্রে জমি খরিদ করে দেন। অথচ পায়রা নেছা বিবি অন্যের স্ত্রী থাকাবস্থায় ১৯৫৫ সালের ৯ জুলাই প্রথম মৃত স্বামীর নাবালক সন্তানের নামে খরিদকৃত জমি ওয়াকফ করে যান। দ্বিতীয় বিয়ের পর প্রথম স্বামীর সন্তানের জমি ওয়াকফ করতে পারেন কিনা এই প্রশ্ন তোলেন আবুল ইসলামের ছেলে শওকত আলী মিয়া। তার ভাষ্য জাল জোচ্চুরির মাধ্যমে তার পিতার সম্পত্তি ওয়াকফ করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর ওয়াকফ প্রশাসকের দপ্তরে অভিযোগ করেন। এছাড়া তার পিতা জীবদ্দশায় সম্পদের মালিকানা নিয়ে ঝিনাইদহ জজ আদালতে মামলা করেন। যার নং ২০৩/২০। শওকত আলী জানান, পায়রা নেছা বিবি হচ্ছে তার দাদি। যদি তিনি অবৈধ ভাবে প্রথম স্বামীর নাবালক ছেলের সম্পত্তি ওয়াকফ করেই যান তবে তার মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হওয়ার কথা আবুল ইসলামের ওয়ারেশগন। কিন্তু এখন মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করছেন দাদির দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে আব্দুর রাজ্জাকের তৃতীয় পুত্র শরিফুল আলম। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পায়রা নেছা বিবি ওয়াকফ্ ষ্টেটের ২১টি দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলো থেকে ভাড়া ওঠে মাসে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। এই হিসেবে বছরে ভাড়া ওঠে ৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। অথচ ওয়াকফ প্রশাসনে ষ্টেটের আয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা। তিনি প্রশ্ন তোলেন বছরে ঘর ভাড়া বাবদ ওঠা বাকী ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা কোথায় যায় ? ষ্টেট থেকে অর্জিত আয়ের টাকা ব্যাংকে রাখার বিধান থাকলেও তা রাখা হচ্ছে না। তিনি পায়রা নেছা বিবি ওয়াকফ্ ষ্টেটের মোতাওয়াল্লী পরিবর্তনের দাবী জানান। এ বিষয়ে তদন্তে আসা বৃহত্তর খুলনা ও যশোর জেলার ওয়াকফ পরিদর্শক মোঃ শামিমুল হক জানান, ওয়াকফ প্রশাসক যাকে নিয়োগ দিবেন তিনিই সঠিক। তবে এক্ষেত্রে দলিল ফলো করতে হয়। তিনি বলেন, প্রশাসক যেহেতু সচিব পদমর্যাদার তাই তিনি জেনে বুঝেই করেছেন। পায়রা নেছা বিবি ওয়াকফ্ ষ্টেটের মোতাওয়াল্লী শরিফুল আলম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, এই ষ্টেট ওয়াকফ প্রশাসনের নির্দেশনা মতে সঠিক ও বৈধ ভাবেই চলছে। এখানে কোন জাল জোচ্চুরি নেই। আমার দাদা আব্দুল হামিদ বড় মনে মানুষ ছিলেন বলেই পালিত সন্তান আবুল ইসলামের নামে এই জমি কিনে দিয়েছিলেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, শওকত আলী মিয়া আমাকে ষ্টেটের সম্পদ ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেটা আমি করিনি। ষ্টেট একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে লুটপট, অনিয়ম ও দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। বরং অভিযোগকারী ওয়াকফ ষ্টেট ও ওয়াকফ প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে অযথা হয়রানী করছেন যা দুঃখজনক।