ঝিনাইদহ—১ আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুল হাই এমপি মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহে রাজেউন)। শনিবার থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকাল ৭টার সময় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিউমোনিয়া রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৮ বছর। থাইল্যান্ড থেকে মৃত্যুর খবরটি নিশ্চত করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী শহিদুল ইসলাম। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুল হাই ১৯৫২ সালে শৈলকুপা উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। পিতা ফয়জুদ্দিন মোল্লা ও মাতার ছকিরন নেছা দম্পতির ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। তার শিক্ষাজীবন শুরু পার্শবর্তী মির্জাপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মাধ্যমিক পাশ করার পর ভর্তি হন ঝিনাইদহ কেশবচন্দ্র কলেজে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে বিএ পাশ করেন। স্কুল জীবনে বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। বিপদে—আপনে ছুটে যান কর্মীদের পাশে। সেই থেকে তার জনপ্রিয়তা শুরু। ১৯৬৯ সালে সরকারি কেসি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্রলীগের সহ—সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঝাপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সেখানেও তিনি নেতৃত্বের স্বাক্ষর রাখেন। স্বাধীনতা বিরোধীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে তিনিই ঝিনাইদহে স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি ঝিনাইদহ যুবলীগের আহবায়ক ও ১৯৭৩ সালে যুবলীগের মহকুমা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আশির দশকে জেলা আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৮ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ—১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। সেই নির্বাচনে সারাদেশে মাত্র ৫৮টি আসনে বিজয় লাভ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসন ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইয়ের শৈলকুপা আসন। স্বাধীনতার টানা ৩০ বছর পর তিনি শৈলকুপা আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রাখতে ভুমিকা পালন করেন। তিনি ২০০১ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আব্দুল হাই এমপি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের কাউন্সিলে দ্বিতীয় বারের মতো ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তৃতীয়বারের মতো জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। এদিকে আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে ঝিনাইদহ জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুর খবরে শৈলকুপার নেতাকর্মীরা শোকে মুহ্যমান। মৃত্যুর খবর শোনা মাত্রই ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর তার বাসায় নেতাকর্মীরা ছুটে আসেন। এদিকে আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। তার প্রথম জানাজা থাইল্যান্ডে অনুষ্টিত হয়েছে ২য় জানাজা অনুষ্টিত হবে আগামীকাল সকাল ৮ টায় সংসদ ভবনে ৩য় জানাজা হবে বাদ জোহর ঝিনাইদহ উজির আলী বিদ্যালয় মাঠে ৪র্থ জানাজা হবে বাদ আছর সরকারী শৈলকুপা ডিগ্রী কলেজ মাঠে ৫ম এবং শেষ জানাজা অনুষ্টিত হবে তাঁর নিজ গ্রাম মোহাম্মদপুর মাঠে। এর পর পারিবারিক গোরস্থানে দাফন হবে। আব্দুল হাই—এর মৃত্যুতে দেশের রাজনীতিতে একটি শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক, জনপ্রিয় নেতা এবং দেশপ্রেমিক। তার মৃত্যুতে জাতি একজন মূল্যবান ব্যক্তিত্ব হারিয়েছে।