১৫১ শতক জমিতে সুগন্ধি ধানের চাষ করেছিলেন হতদরিদ্র কৃষক নৃপেন মন্ডল। ধানগাছও হয়েছিল ভালো। আশা ছিল শতাধিক মন ধান পাবেন। যা বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হবে। এই আশা নিয়ে ধারদেনা করে চাষে খরচও করেছেন প্রায় ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু এক রাতেই তার সব আশা শেষ হয়ে গেছে। দুবৃত্তরা তার ধান ক্ষেতে কীটনাশক ঔষধ স্প্রে করে সব ধান গাছ পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন গোটা ক্ষেতের সবুজ ধান গাছ পুড়ে সোনালী রং ধারন করেছে। ঘটনাটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নে ভিটশ্বর গ্রামের।
কৃষক নৃপেন মন্ডল জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম ধান গাছের রং পরিবর্তন হতে দেখেন। আস্তে আস্তে গোটা ক্ষেতের সব গাছ পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। তিনি ধারনা করছেন কয়েকদিন পূর্বে এই ঔষধ স্প্রে করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে ধরা পড়েছে। এ বিষয়ে তিনি ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন বলে জানান।
ক্ষেতের মালিক ভিটশ্বর গ্রামের হৃষিকেষ মন্ডলের ছেলে নৃপেল মন্ডল অভিযোগে জানান, তিনি কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তিন ছেলে তারাও কৃষি কাজ করেন। মাঠে নিজেদের মাত্র ২৫ কাঠা জমি আছে। এই জমিতে ধান চাষ করেন। অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। নিজেদের ওই ২৫ কাঠা জমির ফসল আর অন্যের ক্ষেতে কাজ করে করা আয় দিয়ে কষ্ট করে তাদের ১১ জনের সংসার চলে। অনেক সময় সংসার চালাতে তাদের হিমসিম খেতে হয়। যে কারনে আশা করেছিলেন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধানের চাষ করবেন। একটু বেশি আয় করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন।
নৃপেন মন্ডল আরো জানান, এই আশা নিয়ে দুই বছর পূর্বে ১৫১ শতক জমি বাঁধা নেন গ্রামের ফারুক হোসেনের নিকট থেকে। এই জমিতে তারা চাষাবাদ করতে থাকেন। এবছর ধান চাষ করেছিলেন। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে মাঠ থেকে এসে এক ব্যক্তি তাকে খবর দেন ধঅন ক্ষেতের ধান গাছগুলো কেমন যেন মরা মনে হচ্ছে। এই দেখে তিনি মাঠে ছুটে যান। গিয়ে দেখতে পান ধান গাছের পাতাগুলো নুইয়ে পড়েছে। এই দেখে তিনি হতবাক হন। কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারেননি। পরে ধান গাছের পরিস্তিতি আরো খারাপ হলে বুঝতে পারেন কেউ তার জমির ধান গাছ মেরে দিয়েছে। আস্তে আস্তে পাতা পুড়ে সোনালী রং ধারন করায় বুঝতে পেরেছেন কীটনাশক দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নৃপেন মন্ডল জানান, ছেলেরা সবাই ক্ষেতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, তিনিও কান্না ধরে রাখতে পারেননি। কেউ এভাবে ফসলের ক্ষতি করতে পারে এটা ভাবতেও পারছেন না।
নৃপেন মন্ডলের পুত্র উজ্জল কুমার মন্ডল জানান, এই জমি নিয়ে মূল মালিকের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। মালিক ফারুক হোসেন তাদের কাছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বাঁধা দিয়ে বিদেশে চলে যান। এরপর তার পরিবারের লোকজন ওই টাকা ফেরত না দিয়েই জমি ফেরত নিতে চান। যা নিয়ে কয়েকদফা সালিসও হয়েছে। এখন জমির মুল মালিক ফারুক হোসেন বিদেশে থাকলেও তার ভাই মতিয়ার রহমান নানা ষড়যন্ত্র করছেন। যে কারনে সন্দেহ, তারাই এই ঘটনা ঘটাতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে তারা ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
গ্রামের কৃষক মিন্টু শেখ জানান, এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টির উপর নানা ভাবে নির্যাতন চলে। তারা কিছু মানুষ পক্ষে থাকায় এখনও গ্রামে বসবাস করছেন। তবে মাঝে মধ্যেই তাদের উপর নানা অন্যায় হয়। এই ধান ক্ষেতের ধান গাছ পুড়িয়ে দেওয়া একটা বড় অন্যায়। যার ক্ষমা হওয়া উচিত নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ধান ক্ষেতটি যিনিই দেখছেন, তিনিই কষ্ট পাচ্ছেন।
অবশ্য জমির মালিক ফারুক হোসেনের ভাই মতিয়ার রহমান জানান, নৃপেন মন্ডল তাদের এই জমিটি অন্যায় ভাবে জোর করে দখল করে রেখেছেন। তারা যে বন্দকি দলিল দেখাচ্ছেন সেখানে জমির মালিকের স্বাক্ষর নেই। বর্তমান সরকার দলের ছত্রছায়ায় থেকে তার অপর দুই ভাইকে দিয়ে জোর করে একটি চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করে নিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। একজনের জমি অন্যজন বন্ধক রাখতে পারেন না। তিনি আরো বলেন, কিভাবে ধান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে তা তার জানা নেই, তবে ধারনা করছেন জমি ফেরত না দেওয়ার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করে তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত চলছে। চেষ্টা করছেন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।