ঝিনাইদহে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নামে এতিমদের বরাদ্দকৃত সরকারি টাকা আত্মসাৎ এর অভিয়োগ পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার ২নং মধুহাটি ইউনিয়ের বেড়াশুলা গ্রামের বেড়াশুলা আদর্শ এতিমখানায় ছাত্র বেশি দেখিয়ে দির্ঘদিন ধরে সরকারি বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করছে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক বেড়াশুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম। তার দুর্নীতির কারনে এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ১২ অক্টোবর সমাজসেবা অফিস তার দুর্নীতির তদন্তে যাবার কথাও এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বেড়াশুলা আদর্শ এতিমখানায় গত অর্থ বছরের ২৪ জন এতিমের প্রতি জনের মাসিক বরাদ্দ ২০০০/- টাকা করে মোট (৫,৭৬, ০০০/-) পাঁচ লক্ষ ছিয়াত্তর টাকা অগ্রণী ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে এতিমখানার নামে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ওই এতিমখানার টাকা দেওয়া চলমান আছে।
সরোজমিনে ৯ই জুলাই, ৩০শে আগষ্ট, ১১ই সেপ্টেম্বর ও ১১ই অক্টোবর ২০২০ এ এতিমখানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে ৪ থেকে ৬জন এতিম শিশু আছে। এবং তাদের দিয়ে মাদরাসার নির্মাণ কাজের ইট টানা হচ্ছে। ২য় বার গিয়ে পাওয়া যায় ৪জন, ৩য় বার গিয়ে দেখা যায় ৪জন এতিম শিশু। এতিমখানা পরিচালনা কামিটির খোঁজ করা হলে দেখাযায় বেড়াশুলা গ্রামের মোঃ আক্কাচ আলী সভাপতি ও একই গ্রামের বেড়াশুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা সমাজসেবা অফিস থেকে পারমিউশন নিয়ে আসার কথা বলে। পরে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুবেল হাওলাদের সাথে কথা হলে তিনি কোন পারমিউশন লাগবে না বললে তখন তারা প্রতিষ্ঠানের কমিটির রেজুলেশন বই, আয়ব্যায়ের খাতা ও শিক্ষক কর্মচারীদের বেতনের খাতা দেখান। এতিমদের ভর্তি রেজুলেশন বই ও তাদের হাজিরা খাতা দেখাতে চাইলে তারা দেখাতে পারে নাই। এছাড়াও তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের আয়ব্যায়ের ব্যাংক হিসাব দেখতে চাইলে সেটা দিতেও গড়িমিশি করতে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি জানান, এই প্রতিষ্টান হবার পর থেকেই এই কমিটি। আজ পর্যন্ত এই কমিটির কোন পরিবর্তন হয়নি। এছাড়াও এই এতিমখানায় প্রবাসি ও বিভিন্ন সরকারি বে-সরকারি, চেয়ারম্যান, মেম্বর এবং সাধারণ জনগণের দান-অনুদানের টাকাতে করা কিন্তু সিরাজুল মাস্টার সেই কাটার কোন স্বচ্ছ হিসাব দেয়না যার কারনে এই এতিমখানার বর্তমান করুন অবস্থা বিরাজ করছে।
গোপন সংবাদের তথ্যমতে বেড়াশুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম এতিমখানার প্রথম থেকেই এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। যার ফলে সমস্ত আর্থিক লেনদেন সেই করে থাকে। এছাড়াও রেজুলেশন বইতে দেখা দেখে ২০০৫ সাল হতে এ পর্যন্ত তার স্বাক্ষরেই সমস্ত আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এতিমখানর শিক্ষক ও কর্মচারিদের বেতনের খাতায়ও তার এবং উপজেলা কর্মকর্তার স্বাক্ষর, সেখানে সভাপতির কোন স্বাক্ষর নাই।
এছাড়াও শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম তার নিজের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও বেড়াশুলা মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব একক ভাবে পালন করেন। যার কারনে এতিমখানার শিক্ষক, বেড়াশুলা মাদরাসার শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য করে চলেছেন। এতিম খানার এতিমদের টাকা আত্মসাৎ সহ মাদরাসার নিয়োগ বাণিজ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এলাকার ক্ষমতাশীল হওয়ায় তিন প্রতিষ্ঠানে একক আর্ধিপত্ত বিরাজ করে প্রতিষ্ঠানের সকল আর্থিক লেনদেন সেই করে থাকে। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলে তাকে মিথ্যা মামলা ও দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে বেড়াশুলা গ্রামের মেম্বর মোঃ রসুল মিয়া জানান, আমাদের গ্রামের এই তিনটি প্রতিষ্ঠানেই সিরাজুল মাস্টার কমিটিগুলো পরিচালনা করে থাকেন। এতিমদের বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড়াও বিভিন্ন দান অনুদানের টাকার কোন হিসাব না দিয়েই তার মত করে সে কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা যদি পারেন সঠিক তথ্য নিয়ে এর একটা ব্যবস্থা করবেন। এবং আশা করি সঠিক তদন্ত হলে সে এতিমের টাকা আত্মসাৎ এর সাজা পাবে।
বেড়াশুলা গ্রামের কামাল উদ্দীন জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়েও কি করে একটি এতিমখানা ও একটি মাদরাসার কমিটিতে থাকতে পারে। তার পরেও সে এতিমখানার এতিমদের প্রতি সরকারি যে বরাদ্দ আসে সে টাকাও, সে আত্মসাৎ করেছে। আবার এই বেড়াশুলা মাদরাসার তিনজন লোক নিয়োগ হবার কথা, সেখানেও সে প্রতিজনের কাছ থেকে ৭ থেকে ৯ লক্ষ টাকা করে চুক্তি করেছে। এসব অনিয়ম গুলো দেখার কেউ নেই। আমরা বলতে গেলে আমাদের বিভিন্ন ভয়ভিতি দেখায়। যে দেশে সাবেক প্রধান মন্ত্রী এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করার দায়ে তাকে জেল খাটতে হয়েছে সে দেশে এই সিরাজ মাস্টারের মত লোকেরও সাজা হবে বলে আমরা মনি করি।
এবিষয়ে বেড়াশুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলামের কাছে জিজ্ঞাসা করলে নিতি তথ্য না দিয়ে বলেন, আপনারা আগে সমাজসেবা অফিস থেকে পারমিউশন নিয়ে আসেন তারপর আপনাদের তথ্য দিবো। তার তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এবং প্রতিষ্ঠানের সকল উন্নোয়নের কাজ করে চলেছি। আমাদের এখানে সবসময় ২৪ থেকে ২৭জন এতিম পড়াশুনা করে আসছে। আর এতবছর ধরে কাজ করে আসছি একটু আকটু ভুল হতেই পারে এটা আমরা একটু ঠিক করে নিয়েন।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ রুবেল হাওলাদার জানান, আমরা বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল মাস্টারের নামে লিখিত ভাবে কোন অভিযোগ পায়নি কিন্তু তার বিরুদ্ধে মৌখিক ভাবে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত করে দেখব। তার বিরুদ্ধে যদি কোন প্রমাণ পায় তাহলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
কোন সরকারি চাকুরী জীবি এতিমখানার কমিটিতে থাকতে পারবে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের তেমন কোন বাধ্য-বাধ্যকতা নাই তবে সরকারি চাকুরি জীবিদের ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠানে যদি আর্থিক লেনদেনের বিষয় থাকে তাহলে সে সেখানে থাকতে পারবে না এমনটাই বলা আছে। সেক্ষেত্রে সে বে-আইনি ভাবে ওই কমিটিতে আছে।