যন্ত্রদানব নিষিদ্ধ ট্রাক্টরে অতিষ্ঠ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সকল রাস্তা। ট্রাক্টরের দৌরাত্বে প্রতিনিয়ত নস্ট হচ্ছে কাঁচা পাকা রাস্তা। এছাড়াও এ সকল ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। গ্রামীণ সড়কের চলাচলকারী জনসাধারণ অবৈধ ট্রাক্টরের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। উপজেলার আঞ্চলিক মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কে অবাধে ধাবিয়ে বেড়োচ্ছে নিষিদ্ধ যন্ত্রদানব ট্রাক্টর। চাষাবাদের জন্য আমদানিকৃত ট্রাক্টর এখন অবৈধ ট্রাক বা পরিবহন হয়ে গ্রামীণ জনপদে সর্বনাশ ঘটাতে শুরু করেছে। বিরামহীন চলাচলে শব্দ দুষণেও আশপাশের গ্রামের মানুষ, রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ যন্ত্রদানবের প্রতি নজর নেই কালীগঞ্জের প্রশাসনের।
এক দোকানী বলেন এসব ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তা – ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে গেলে। ধূলা – বালির কারণে ১০ গজ দূরের কোনো দৃশ্যই দেখা যায় না। কয়েক মিনিট পর পরই একটি -দুটি করে মাটি, বালি ও ইট ভর্তি ট্রলি বেপরোয়া ভাবে চলাচল করছে।
জাকির হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, উপজেলার রঘুনাথপুর বাজারের পাশে গড়ে উঠা ইট ভাটার মালিক এসব ট্রাক্টর ব্যবহার করে রাস্তা – ঘাট ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। যে কারণে ১০ মিনিটের রাস্তায় ৩০ মিনিট সময় বেশি লাগে। পাশাপাশি ধূলার কারণে ১০ গজ দূরের কোনো চোখে পড়ে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, এসব অবৈধ ট্রাক্টর গুলো রাস্তা – ঘাট ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করলেও এসব বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।
জানাযায়, উপজেলার সবকয়টি ইট ভাটার ইট ও মাটি পরিবহনের কাজেই মূলত ব্যবহৃত হচ্ছে এসকল ট্রাক্টর। এসকল ট্রাক্টরের নেই কোন বৈধ রোডপার্মিট। তাছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় ১৫ থেকে ২০ বছরের শিশু- কিশোররাও এসব ট্রাক্টর অবাধে চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
ভ্যান চালক বলেন, ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারনে আমরা অনেক সময় বিপদে পরি, আমারা গরিব মানুষ, রাস্তায় চলার সময় ট্রাক্টর আসলে আমরা প্রায় সময় খাদে পড়ি। সরকারের কোটি কোটি টাকার রাস্তাঘাট ধ্বংস করছেন গুটিকয়েক ইটভাটার মালিক। তারা স্বল্পমূল্যে ফসলি জমির মাটি কিনে ভাটায় পরিবহনের ফলে বিলীন হচ্ছে রাস্তাঘাট এবং ট্রাক্টরের চাকায় প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে গ্রামের সদ্য নির্মিত কাঁচা, আধা পাকা -পাকা সড়কগুলো।
পিরোজপুর গ্রামের শাহারুল ইসলাম সাংবাদিক কে বলেন , উপজেলার বারবাজার পিরোজপুরের জে কে বি ভাটার মালিক বলেন আমি এলাকার প্রভাবশালী আমার খুঁটির জোরে এসকল ট্রাক্টর বহাল তবিয়তে চালাচ্ছি । আমি প্রশাসন ম্যানেজ করেই চলি, আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই কারর।
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচল গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমির উর্বর টপসয়েল কেটে ইটভাটার সরবরাহ এবং পুকুর-দীঘিনালা ভরাট চলছে। ট্রাক্টরের অত্যাচারের মুখে গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রোড পারমিশন বিহীন ট্রাক্টর ও লাইসেন্স বিহীন চালকের কারণে দোকার পাট, রাস্তা- ঘাটে চলাচলকারী মানুষ সার্বক্ষনিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে চলাচল করছে। বিকট শব্দে মাটি বোঝাই নিয়ে সাদা পাউডারের মত ধুলো উড়িয়ে ধাবিয়ে চলছে এরা। এভাবেই কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের পাড়া মহল্লার সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তা সহ উপজেলার প্রত্যেক সংযুক্ত সড়ক গুলোতেই দিনরাত চষে বেড়াচ্ছে প্রায় ২ শতাধিক অবৈধ ট্রাক্টর।
তবে এলাকাবাসীরা সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের কাছে ট্রাক্টর বন্ধের দাবি করে বলেন, আমরা বুঝতে পারি না, ট্রাক্টর চলাচল বন্ধের কাজটি কেন এতো কঠিন। ট্রাক্টর চলাচলে যাদের স্বার্থরক্ষাহয়, তারা কি অকাল ও অস্বাভাবিক মৃত্যুরোধে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ আদালত নিজের বিবেকের রায়ে স্বার্থ জলাঞ্জলির কথা মোটেও ভাবতে পারবে না? এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, এসব টলি ট্রাক্টর রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি করে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্ণা রানী সাহা বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি নিষিদ্ধ ট্রাক্টর বন্ধের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোপূর্বে জেলায় কয়কেটি ভাটা মালিককে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। এ নিয়ে নিয়মিত অভিযান চলবে। উপজেলায় খুব দ্রুত এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ গ্রহণ করা হবে।