ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু করাসহ অন্যান্য সমস্যার যথাযথ সমাধানের দাবিতে ২০১৯ সালের এপ্রিলে নীলক্ষেত অবরোধ করে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা৷ এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়৷ অধিভুক্ত এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ কলেজে ‘ডেডিকেটেড ডেস্ক’ বসানো হবে বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ৷
তবে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত কাগজেকলমেই আটকে যায়। গত দেড় বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি৷ ভুল ফলাফল প্রকাশ আগের মতই রয়েছে৷ পরীক্ষা দিলেও ফলাফল প্রকাশের পর অনেক শিক্ষার্থীর ফলাফলে এক বা একাধিক বিষয়ে অনুপস্থিত দেখায়৷
এতে ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থীকে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে হাজিরা খাতার ফটোকপি সংগ্রহ করে লিখিত আবেদন সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে হয়৷ শিক্ষার্থীর লেখা ঐ আবেদনপত্রে নিজ কলেজের অধ্যক্ষের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷
ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন তাঁদের কলেজের অফিস সহায়করা ও পুরোপুরি জানেনা এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের৷ আবেদন জমা দেয়া বা অফিসিয়ালি কাজের জন্য তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়েই যেতে হচ্ছে৷
কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছিল, ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু হলে শিক্ষার্থীর আবেদন জমা বা অফিসিয়ালি কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে না৷ শিক্ষার্থীরা তাদের কাগজপত্র নিজ কলেজের ডেডিকেটেড ডেক্সের দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়কের কাছে জমা দিলেই তা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে যাবে৷
অধিভুক্ত বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া শারমিন বলেন, ফলাফল সমন্বয়ের আবেদন আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে করতে হয়েছে৷ অথচ ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু থাকলে সেটা কলেজে জমা দিলেই হতো৷ দীর্ঘদিনেও এটা চালু হয়নি৷ আমরা চাই প্রত্যেক কলেজে এটা চালু হোক যাতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমে৷
কোভিডকালীন সময়ে ফলাফল সমন্বয়ের আবেদন প্রক্রিয়াটি অনলাইনে করার সুবিধা চালু করা হলেও শিক্ষার্থীদের দাবি যেন অতি শীঘ্রই ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু করা হয়।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু করাসহ নানন দাবিতে সংগঠিত ঐ আন্দোলনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবু বকর ৷ তিনি বলেন, এত দিনেও ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু না হওয়া দুঃখ জনক৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে এটা করবে৷ কিন্তু আমাদের কলেজ কর্তৃপক্ষ এটা করেনি৷ আমরা চাই এটা দ্রুত চালু হোক৷
অবশ্য কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য ভিন্ন কথা বলছে৷ তাঁরা বলছেন লোকবল সংকটে তাঁরা ‘ডেডিকেটেট ডেস্ক’ চালু করতে পারছেন না৷
এর বাইরে নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, ক্লাসরুম সংকটসহ নানান সমস্যার কথাও জানান শিক্ষার্থীরা। শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজে রয়েছে শিক্ষক এবং ক্লাসরুম সংকট।
তবে শিক্ষার্থীদের এতসব অভিযোগ মানতে নারাজ সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক এবং ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার।
তিনি বলেন, সেশনজট সমস্যা আমরা কাটিয়েই উঠছিলাম। করোনা পরিস্থিতিতে আবারও সেই সমস্যা সামনে চলে এসেছে। আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা একা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় দুটোই দিকই দেখতে হয়। সাত কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নে আমরা সবাই যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। খুব দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান হবে। স্বাভাবিক গতিশীলতা ফিরে আসবে।
এছাড়াও সাত কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ানো সহ সরকারের বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক৷